বন্ধুত্বের গল্প
বন্ধুত্বের গল্প
ষাট-সত্তরের দশকে বিশ্ব মিডিয়ায় রীতিমতো হৈ চৈ ফেলে দেয় একজন প্রেসিডেন্টের সাথে একজন উটের রাখালের বন্ধুত্বের গল্প। এদের একজন হলেন- আমেরিকার ৩৬ তম প্রেসিডেন্ট লিনডন জনসন আর উটের রাখাল বশির আহমেদ।
১৯৬০ সালের মে মাসের বিশ তারিখ লিনডন জনসন আমেরিকার ৩৭ তম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে পাকিস্তান সফরে আসেন। মটর কাফেলা এগিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার দুপাশ জুড়ে মানুষের সারি। এতো বড় ক্ষমতাবান মানুষকে সবাই এক নজর দেখতে চায়। এর মাঝে লিনডন জনসন দেখেন উটের গলা ধরে দাঁড়িয়ে আছে একজন মানুষ। এতো বড় মানুষ পাকিস্তান সফর করছেন- সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। techBangla (antihow.blogspot.com)
ভাইস প্রেসিডেন্ট তাঁর গাড়ী থামিয়ে লোকটির সাথে দোভাষীর মাধ্যমে কথা বলা শুরু করেন?
কি নাম?
আমার না আমার উটের?
দুজনেরই নাম বলেন।
আমার নাম হলো বশির আহমেদ আর আমার উটের নাম হলো গাজি।
বয়স কত?
আমার না আমার উটের।
আপনার উটের?
পাঁচ বছর।
এটুকু আলাপেই মিঃ জনসন লোকটির মাঝে অদ্ভুত সারল্য খুঁজে পান। যা তার ভালো লাগে। তিনি সাথে সাথে বন্ধুত্বের প্রস্তাব করে বলেন-
আমি বন্ধু হতে চাই।
আমার সাথে না উটের সাথে।
হাসতে হাসতে জনসন বলেন- আপনার সাথে। এরপর, নিজের পকেট থেকে একটা কলম বশির আহমেদকে উপহার দিয়ে বলেন- আমি যদি আপনাকে আমেরিকা বেড়ানোর জন্য নিমন্ত্রণ করি তবে কি আপনি যাবেন।
বশির আহমেদ বলেন- অবশ্যই যাবো। তবে আমার উটকে পানি পান করাবে কে?
লিনডন জনসন পাকিস্তান সফর শেষে আমেরিকা ফিরে যান। সবাই মনে করে- এটা ছিলো গরীবকে বুকে জড়িয়ে মিডিয়ায় জায়গা পাওয়ার জন্য লিনডনের একটা ম্যাকিয়াভেলি স্টান্ট। কয়েক সপ্তাহ পরেই লিনডন দূতবাসকে বলেন- বশির আহমেদকে আমেরিকা যাওয়ার সব ব্যবস্থা দ্রুত সম্পন্ন করতে। কেউ বিশ্বাস করতে পারেনা। লিনডন নিজেই ফোন করে এ্যাম্বেসির মাধ্যমে বশির আহমেদের সাথে কথা বলেন। পরদিন পত্রিকায় হেড লাইন নিউজ হয়ঃ মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিনডনের ব্যক্তিগত আমন্ত্রনে বশির আহমেদের আমেরিকা সফর। পত্রিকার পাতা জুড়ে বশির আহমেদের ইন্টারভিয়্যু। এ্যাম্বেসির কর্মকর্তা সহ উচ্চ পদস্থ সবার শুরু হয় দৌড় ঝাপ। ভিসা , প্লেনের টিকেট সব প্রস্তুত । বশির আহমেদের জন্য কেনা হয় নতুন কাপড়। এসবের মাঝে বশির আহমেদের একটাই কথা- আমি চলে গেলে আমার উটকে খাওয়াবে কে? পানি পান করাবে কে?
প্রতিদিন ২৫ রুপিতে একজন রাখালের ব্যবস্থা করা হয়। বশির আহমেদের অবর্তমানে যিনি তার উটের খাবার দাবার - পানির ব্যবস্থা করবেন বন্ধুত্বের গল্প।
১৯৬১ সালের ১৪ই অক্টোবর প্যান এমের প্রথম শ্রেনীতে চড়ে বশির আহমেদ পাকিস্তান থেকে বিলেত হয়ে আমেরিকার পথে যাত্রা শুরু করেন। পাকিস্তানী দুজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, একজন দোভাষী, একজন মার্কিন কর্মকর্তা বশির আহমেদের যাবতীয় সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য সফর সঙ্গী হন।
নিউ ইয়র্ক এয়ারপোর্টে ভাইস প্রেসিডেন্ট জনসন নিজেই উপস্থিত হয়ে বশির আহমেদকে স্বাগত জানান। তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন-পাকিস্তানের এ্যম্বেসেডর আজিজ আহমেদ। তখনকার দুনিয়া জোড়া বিখ্যাত হোটেল ওয়ালড্রফ এস্টোরিয়াতে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর দিন- লিনডন জনসন-বশির আহমেদকে সাথে নিয়ে এ্যাম্বেসেডর আজিজ আহমদে, দোভাষী সহ প্রাইভেট প্লেনে করে তার অবকাশ কেন্দ্র ট্যাক্সাসের রেন্চে গমন করেন।
পনের দিন আমেরিকা সফরে বশির আহমেদ ওয়াশিংটন, হোয়াইট হাউস, লিংকন মেমোরিয়াল, সিনেট ফ্লোর, প্রেসিডেন্ট কেনেডির অফিস ইত্যাদি বিখ্যাত স্থান দর্শনের পাশাপাশি ক্যানসাসে সাবেক প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সব কিছুর মাঝে বশির আহমেদ নিয়মিত ফোন করে রাখালের সাথে কথা বলেন। জানতে চান- তার উট ঠিকমতো খাবার পাচ্ছে কিনা। পানি পান করছে কিনা। উটের কানের নীচে একটু ঘায়ের মতো হয়েছিলো- সেটা শুকিয়ে গেছে কিনা। পরিবারে বউ বাচ্চার সাথে আলাপ করে জানতে চান- তারা সবাই ঠিক আছে কিনা।
লিনডন জনসন বলেন- তার পরিবার এমন কোনো উপহার তার কাছ থেকে চায় কিনা?
বউ বলে- সে আমেরিকা যেতে চায়না। সে মক্কায় গিয়ে আল্লাহর ঘর আর মদীনায় গিয়ে নবীর রওজা মোবারক জিয়ারত করতে চায়। অনেক দূরে গিয়ে গ্রামবাসীর পানি আনতে হয়। এলাকায় তাদের পানির কষ্টটা দূর করতে চায়।techBangla (antihow.blogspot.com)
পনের দিন সফর শেষে লিনডন জনসন তার বন্ধু বশির আহমেদকে নিউ ইয়র্ক এয়ারপোর্টে বিদায় জানান। বশির আহমদের ছেলের জন্য বাইসাইকেল, হাতের ঘড়ি, বউয়ের জন্য লেডি বার্ড জনসনের হাতে তৈরি চাদর উপহার হিসাবে দেন। সবচেয়ে দামি যে উপহারটি দেন তা হলো- বশির আহমেদের পুরো পরিবারকে উমরাহ যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। বশির আহমেদ গ্রামে ফিরে দেখেন-এক অবাক কাণ্ড। পানির জন্য গ্রামবাসীকে আর দূরে যেতে হয়না। তাদের ঘরের কাছেই হয়েছে ডীপ টিউবওয়েল।
১৯৬২ সালে জন এফ কেনেডির স্ত্রী জ্যাকোলিন কেনেডি তাঁর বোন সহ পাকিস্তান সফরে আসলে তিনি প্রেসিডেন্ট লিনডনের বন্ধুর সাথে দেখা করার ইচ্ছে পোষণ করেন এবং প্রেসিডেন্ট ভবনে দেখা করেন। ১৯৬৩ সালে জন এফ কেনেডি আততায়ী দ্বারা মর্মান্তিক ভাবে নিহত হলে লিনডন জনসন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন এবং এ খবর তাঁর বন্ধু বশির আহমেদকে জানান।
১৯৭৩ সালে লিনডন জনসন মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো। বন্ধুর মারা যাওয়ার খবর শুনে বশির আহমেদ এ্যাম্বেসিতে যান এবং তাঁর সাথে প্রেসিডেন্টের বন্ধু্ত্বের নানা স্মৃতির কথা বলেন এবং গভীর শোক প্রকাশ করেন।
লিনডন বশির আহমেদকে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করেন। বশির আহমেদ গ্রামের এক মানুষের পরামর্শে পেট্রোল পাম্পের মালিকানা নেন। কিন্তু বশির আহমেদতো নিরক্ষর,সাধারণ সহজ, সরল একজন উটের রাখাল। কিভাবে ব্যবসা পরিচালান করতে হয় তার কিছুই জানেন না। তারপরও লিনডন যতদিন জীবিত ছিলেন- বলতে গেলে তার জীবন অনেক পরিবর্তন এসেছিলো। জীবনে স্বচ্ছলতা এসেছিলো। কিন্তু আমাদের স্বভাব যা -তাই হয়। অন্যের সুখ সইতে পারিনা।
কে বা কারা-বশির আহমেদের ছেলেকে অপহরণ করে। এই ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে তিনি একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েন। সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে- একেবারে ফকির হয়ে যান। জীবনের কোনো হিসাবই মিলাতে না পেরে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে একেবারে কপর্দকহীন নিঃস্ব অবস্থায় বশির আহমেদ ১৯৯২ সালের ১৪ই আগস্ট মৃত্যু বরণ করেন। বশির আহমেদ যখন প্রেসিডেন্টের সাথে আমেরিকা সফর করেন- তখন রিডার্জ ডাইজেস্ট সহ টাইম ম্যাগাজিনের মতো বিশ্ববিখ্যাত পত্রিকায় সংবাদ হয়েছিলো। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার সফর সাথী ছিলেন। আর, তিনি যখন নিঃস্ব হয়ে মারা যান- সেই খবর আর কোনো পত্রিকা দেয়নি। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত বশির আহমেদের জীবন কেমন কেটেছে সেই খবরটাও আর কেউ রাখেনি। পুরো রুপকথার বন্ধুত্বের গল্প যেন বশির আহমেদের এক অবিশ্বাস্য জীবন। দিনে বাদশাহ, রাতে পীর আর ভোরে একেবারে নিঃস্ব, ফকির।
ছবিঃ হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট লিনডন জনসন, রাষ্ট্রদূত আজিজ আহমেদের সাথে বশির আহমেদ।
bggiiiuyyu
ReplyDeleteDue to lack of patience, I could not complete the story
ReplyDelete
ReplyDeleteClick here apk
Click here mod apk download
Click here without watermark
Click here pink
Click here black
Click here green screen