Header Ads

Header ADS

গল্প

 নতুনবছরের শুভেচ্ছা গল্প

বিশ্ববিখ্যাত বোটানিস্ট লুথার বারচবেংক। এক অদ্ভুত উদ্ভিদ পাগল মানুষ। বাগান ভর্তি তাঁর ক্যাকটাস।  এক ভোরে বাগানে হাঁটতে গিয়ে তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে ক্যাকটাসে এতো কাটা কেন?  নিজের প্রশ্নের জবাব নিজেই খুঁজে পান।  মরুর মতো রুক্ষ পরিবেশে নিজেকে বাঁচাতে সেইফটি আর সিকিউরিটির জন্য ক্যাকটাসে কাটা। কাটা ছাড়া সে নিজেকে প্রিজার্ভ করতে পারেনা। এরপর লুথার বারবেংক চিন্তা করেন- কিন্তু আমার এই বাগানেতো ক্যাকটাসের কাউকে ভয় পাওয়ার কথা না।  তিনি বাগান থেকে একটা ক্যাকটাস আলাদা করেন। প্রতিদিন ভোরে তিনি ক্যাকটাসটির পাশে যান। আলতো হাতে স্পর্শ করে বলেন- তোমার কোনো ভয় নেই। তুমি সম্পূর্ণ নিরাপদ এখানে। এখানে, কেউ তোমাকে আঘাত করবেনা। লুথারকে মানুষ পাগল ভাবে। কিন্তু লুথার দিনের পর দিন উদ্ভিদকে ভালোবাসার মন্ত্র শুনান । একদিন ভোরে  লক্ষ করেন- ক্যাকটাস থেকে নতুন পাতা গজিয়েছে এবং সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো সেই পাতায় আর কোনো কাটা নেই। লুথার  ডায়েরীতে লিখলেন- "ভালোবাসা সবাইকে নাড়া দেয়। এ আহ্বানে  উদ্ভিদও সাড়া দেয়"। techBangla (antihow.blogspot.com)

শুধুই কি উদ্ভিদ।  গার্ডিয়ানে পড়ার পর-  ২০১১ সালে  এক  পেঙ্গুইনের কথা আমি লিখেছিলাম। ব্রাজিলের এক দিন মজুর জো পেরেরা কাজ থেকে ফিরার পথে দেখে-সমূদ্র তীরে আটকা পড়ে আছে এক নিঃসঙ্গ যন্ত্রণাকাতর  পেঙ্গুইন। জো পেরেরাতো সাধারণ এক শ্রমিক। সে পরিবেশ, প্রাণ সংরক্ষণ এসবের কিছুই জানেনা। তারপরও পাখিটির জন্য তার মায়া হয়। ঘরে নিয়ে এসে টানা আট মাসের চর্চায়  পেঙ্গুইনটিকে সে সুস্থ করে।  কিন্তু পেঙ্গুইনতো জলের। ডাঙ্গার না। অশ্রুসজল চোখে জো পেরেরা পাখিটিকে বিদায় দেয়। এরপর কেটে গেছে বছর। ২০১২ সালে  জো পেরেরা যে পথে কাজে যায়- সেই পথেই কাজ থেকে ফিরার পথে দেখে  সমূদ্র পাড়ে আরেকটি পেঙ্গুইন। জো পেরেরা পাখিটিকে দেখেও নিজের মতো হাঁটে।  ঘরে ফিরে বিস্ময়াবিভূত জো পেরেরা দেখে-  যে পাখিটি তাকে অনুসরণ করে ঘর পর্যন্ত এসে গেছে- এটাতো সেই  পেঙ্গুইন পাখি। যাকে সে আট মাসের নিবিঢ় পরিচর্যায় জীবন বাঁচিয়েছিলো।  এরপর প্রতিবছরই প্রায় পাঁচ হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে  পেঙ্গুইনটি জো পেরেরার কাছে আসে। কয়েকমাস সময় কাটায়। তারপর ফিরে যায়। বড় অদ্ভুত এই মায়া, বড় অদ্ভুত এই ভালোবাসা।

উদ্ভিদের কথা জানলাম। পাখির কথা জানলাম। এবার এক মানুষের হৃদয়স্পর্শী ক্ষমা আর ভালোবাসার  কথা জানি।  জোহান্সবার্গের ইসুচিবা।  বিয়ের এক বছরের মাথায় তার এক শিশু পুত্রের জন্ম হয় আর সন্তানের মুখ দেখার পরপরই - তিনি গ্রেফতার হন। এ এন সি'র সদস্য ছিলেন। এরপর , রবিন আইল্যাণ্ডে নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে তার সুদীর্ঘ সতেরো  বছর দূর্বিষহ কারা জীবন কাটে। ইসুবিচা বলেন- ওরা মারতো, আঘাত করতো, তামাশা করতো, জন্তুর মতো আচরণ করতো সব কিছু মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু যখন নিজ স্ত্রীর সাথে কথা বলতে দিতোনা -নিজ সন্তানকে একটু আদর করতে দিতোনা। সেটা মেনে নিতে পারতাম না। কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছিলো- বাইরের কারো সাথে কথা বললে-শাস্তি দ্বিগুন হয়ে যাবে। আমার স্ত্রী দেখা করতে এসে সেলের বাইরে থেকে শুধু নিষ্পলক  চেয়ে থাকতো। আমরা শুধু দেখতাম। সুদীর্ঘ  সতেরোটি বছর নিজের চোখের সামনে নিজের বউকে  - নিজের সন্তানকে বড়  হতে দেখলাম। কিন্তু একবারও জিগ্যেস  করতে পারতাম না- প্রিয়তমা তুমি কেমন আছো। ও জিগ্যেস  করতে পারলোনা- এই অন্ধকার কারাগারের নির্জন এক কক্ষে জীবন আমার কেমন কাটছে? সন্তান বড় হয়ে গেলো- তাকে একটু কোলে নিয়ে আদর করতে পারলাম না। বুকের ভিতর দুঃখের করাতে বুকটা বিদীর্ণ হয়ে যেতো।

এতো ঘৃণা বুকের ভিতর জমে ছিলো- নেলসন ম্যাণ্ডলাকে একদিন সেলের পাশে পেয়ে বললাম- যদি একবার বের হতে পারি-শিকারী যেমন হায়েনাকে   হান্ট ডাউন করে মারে। আমিও তেমনি করে ওদেরকে মারবো।  ওরা আমাদের সাথে কুকুরের মতো আচরণ করছে।   ওদেরকে আমি সাপের মতো করে পিটিয়ে মারবো।  ম্যাণ্ডেলা বললেন- ইসু।  প্রতিশোধ  তোমাকে হয়তো রাজ্য দিবে-প্রতিহিংসা হয়তো তোমাকে ক্ষমতা দিবে কিন্তু তোমাকে শান্তি দিবেনা। যদি আমরা কোনোদিন মুক্ত হতে পারি -আদৌ যদি এর কোনো সম্ভাবনা থাকে।  তবে প্রথমেই যে কাজটা আমরা করবো- যারা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এই সেলের কয়েদি বানিয়েছে-জীবন থেকে এতোগুলো বছর কেড়ে নিয়েছে- প্রথমেই  তাদের স্ত্রীর   কাছে যাবো। তারপর, তাদেরকে বলবো-  নিশ্চিত থাকো বোনেরা- তোমাদের কোনো ভয় নেই। তোমাদের  স্বামীরা আমাদের সাথে যা করেছে- আমরা তাদের  সাথে তা করবোনা। স্বামী ছাড়া স্ত্রীর, স্ত্রী ছাড়া স্বামীর, পিতা ছাড়া পুত্রের, পুত্র ছাড়া পিতার যন্ত্রণা আমরা বুঝি। কারণ-আমরা মানুষ। আমরা রক্ত পিপাসু পিশাচ না। আমরা মানুষের জীবন চাই।  ডগফাইটের জীবন চাইনা। জেল থেকে বের হয়ে ম্যান্ডেলা-ইসুচিবা সবাইকে ক্ষমা করে দিলেন।  কয়েক বছর পর ইসুচিবার সন্তান  মারা গেলে এই   সাদা মানুষেরাই  কাঁধে করে তার কফিন বয়ে নিয়ে যায়। ম্যান্ডেলা বলেন-ইসু -এটাই ক্ষমার শক্তি। এটাই ভালোবাসার শক্তি। অন্ধকার  যেমন অন্ধকার দূর করতে পারেনা। আলোয় পারে। ঘৃণায় তেমন ঘৃণা দূর করতে পারেনা। ভালোবাসায় পারে।

আইনস্টাইন বলেছিলেন- ভালোবাসা আর দয়ার  চেয়ে বড় শিক্ষক পৃথিবীতে আর একটিও নাই। ইমাম গাজ্জালি হাঁটতে হাঁটতে কোরআন মুখস্ত করেছিলেন-এটা হলো শুধুই ইনফরমেশন। ভালোবাসা ছাড়া পৃথিবীর যত  জ্ঞান আছে তা শুধুমাত্র ইনফরমেশন ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ইনফরমেশন বই খুঁজলেই , গুগল ঘাঁটলেই পাওয়া যায়। কিন্তু ভালোবাসাটা হৃদয়ে থাকতে হয়।   ভালোবাসা না থাকলে  ঘর হয়ে যায়  গেস্ট হাউজ। পরিবার হয়ে যায়  ক্লাব। ভাই হয়ে যায় কলিগ। বাবা-মা হয়ে যায় পার্টনার। ডাক্তার হয়ে যায় প্রেসক্রাইবার।  বন্ধু হয়ে যায় সহকর্মী।  জননেতা হয়ে যায় শাসক। প্রেমিক-প্রেমিকা হয়ে যায় টাইম পাস আর স্বামী-স্ত্রী হয়ে যায় কেবলি একটা চুক্তিপত্র। ভালোবাসা ছাড়া পৃথিবী হলো সূর্যকিরণ ছাড়া এক মৃত ফুলের বাগান।techBangla (antihow.blogspot.com)

আরেকটি বছর চলে গেলো। কত মানুষের জীবন যে কেড়ে নিলো। অথচ, ২০২০ সালের শুরুতেই আমরা বলেছিলাম হ্যাপি নিউ ইয়ার।  সময় আসে , সময় চলে যায়। মানুষ আসে, মানুষও চলে যায়।   শুধু ভালোবাসাটা রয়ে যায়। এ পৃথিবী তাই প্রতিশোধের না হয়ে ক্ষমার হোক, ঘৃণার না হয় ভালোবাসার হোক। পুরো পৃথিবীটা মানবের মানবিকতায় আর  ভালোবাসার যাদুময়তায়  নতুন করে শুদ্ধ হোক।


reviewvaly.com reviewvaly.com reviewvaly.com reviewvaly.com reviewvaly.com reviewvaly.com reviewvaly.com reviewvaly.com reviewvaly.com

6 comments:

Powered by Blogger.